উত্তরবঙ্গের সবগুলো শহরের মধ্যে গৌড় বাদে নাটোরই সবচেয়ে প্রাচীন শহর। বর্তমানের বিভাগীয় শহর রাজশাহীর নামও অজ্ঞাত ছিল কিন্তু সে সময় নাটোর শহর ছিল গৌরবের শীর্ষে অবস্থিত। ঢাকা, মুর্শিদাবাদ ও কৃষ্ণ নগরের সমকক্ষ ছিল নাটোর।
পূর্বে রাজশাহী জেলার আয়তন ছিল ব্যাপক ও বিস্তৃত। পাবনা, রাজশাহী বগুড়া, রংপুর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও যশোর জেলার কিয়াদাংশ নিয়ে ছিল রাজশাহীর পূর্বাংশ। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান, নদীয়া ও অন্য এলাকা নিয়ে ছিল পশ্চিমাংশ যা নিজ রাজশাহী নামে পরিচিত। পূর্বাংশ ও পশ্চিমাংশ নিয়ে ছিল সমগ্র রাজশাহী জেলা এবং এর আয়তন ছিল ১২,৯৯৯ বর্গমাইল। সমগ্র রাজশাহীর শাসনব্যবস্থা নাটোর থেকে পরিচালিত হতো এর প্রধান কারণ হল রাণী ভবানীর জমিদারীর রাজধানী ছিল নাটোর।
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমলেও জমিদারীকে প্রশাসনিক ইউনিট মনে করা হতো। কোম্পানী ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজশাহী সদর ছিল নাটোরে। রাজশাহী জেলায় প্রথম জেলা প্রশাসক যিনি সুপার ভাইজার নামে পরিচিত ছিলেন, কোম্পানী কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে ১৭৬৯ সালে সদর কার্যালয় নাটোরে আগমন করেন। তখন থেকেই নাটোর জেলা হেড কোয়ার্টারে পরিণত হয় এবং ১৮২৫ সাল পর্যন্ত জেলা সদর নাটোরেই ছিল। নাটোর রাজাদের নিজস্ব জেল, পুলিশবাহিনী এবং দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার বিচারের ক্ষমতাও ছিল। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিং দেওয়ানী ও ফৌজাদারী আদালত স্থাপন করেন ফলে নাটোর রাজ মামলার বিচারের ক্ষমতা হারান কিন্তু নাটোরই ছিল রাজশাহী জেলার প্রাণকেন্দ্র ও প্রশাসনিক কেন্দ্র বিন্দু। নাটোর থেকেই পরিচালিত হতো সমগ্র রাজশাহী জেলার শাসনব্যবস্থা।
রাজশাহী জেলার প্রথম জেলখানা বর্তমানে নাটোরের সন্নিকটে তেবাড়ীয়াতে স্থাপন করা হয়। নারোদ নদের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নাটোর অস্বাস্থ্যকর স্থানে পরিণত হয়। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব এবং ভাল ড্রেন ব্যবস্থা ও বদ্ধ পানি নিষ্কাশনের কোন সহজ পথ না থাকায় স্থানটি দুষিত হয়ে উঠে। এসব কারণে রাজশাহীর কালেক্টর মিঃ জে, এ প্রিংগলকে একটি নতুন স্থানের সন্ধান করতে বলা হয়। মিঃ প্রিংগল ১৮২২ সালের ২৩ শে এপ্রিল রামপুর বোয়ালিয়ার কথা সমর্থন করে রিপোর্ট প্রদান করেন এবং সে অনুসারে ১৮২৫ সালে নাটোর থেকে জেলা সদর রামপুর বোয়ালিতে স্থানান্তরিত হয়।
পুরাতন প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র ও গৌরব রক্ষার জন্য ১৮২৯ সালে নাটোরকে মহকুমায় পরিণত করা হয়। মিঃ এলফিল্টোন জ্যাকসন প্রথম মহকুমা অধিকর্তা হিসেবে কাজ করেন এবং সে সময় হতে বৃটিশ ভারতের শেষ অবধি, সমগ্র পাকিস্তানী আমল এবং বাংলাদেশের ১৯৮২ সালের পূর্ব পর্যন্ত নাটোর মহকুমা হিসেবেই গণ্য ছিল। মহকুমা প্রশাসকবৃন্দের মধ্যে পি.এ নাজির, রাষ্ট্রপতি-বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ এ জেলার প্রভূত উন্নতি সাধন করেছিলেন।
১৯৮২ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে পুরাতন মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয় এবং ১৯৮৪ সালে ৭৩৭ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে নাটোর জেলার যাত্রা শুরু হয়। নাটোরের প্রথম জেলা প্রশাসক ছিলেন এ. এম. আব্দুল জববার। তিনি ২৫/০১/১৯৮৪ থেকে ২০/০৬/১৯৮৪ তারিখ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রাক্তন জেলা প্রশাসকদের মধ্যে জনাব জালাল উদ্দিন আহমেদ নাটোর জেলায় ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও শিক্ষা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, জনাব শেখ আকরাম আলী নাটোর যুব পার্ক প্রতিষ্ঠা করেন এবং জনাব মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন ডিসি পার্ক ও কালেক্টরেট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া অন্যান্য জেলা প্রশাসকগণও এ জেলার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস