সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে সেবাদানের এক বছর পূর্তি হল আজ!
প্রশাসন ক্যাডারের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে কাজের বৈচিত্র্য। গত এক বছরে আমারও অনেক বিচিত্র কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
১) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে বসে অনেক শিশু সন্তানকে তাদের মায়ের বা উপযুক্ত অভিভাবকের কোলে তুলে দিয়েছি , প্রাণভয়ে থাকা অনেকের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি।
২) মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অপরাধীকে ঘটনাস্থলেই প্রমাণসহ আটক করে স্বীয় স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বিচার করেছি। এখনো পর্যন্ত প্রায় ৪০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৫০এর ও বেশি জন আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি এবং প্রায়৫ লক্ষাধিক টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছি। নানান রকম অপরাধের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট চালানোর মাধ্যমে জনগণকে নিরাপদে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিঃ
-ইয়াবা, গাজার ব্যবসা, বহন-সেবন
-নয় প্রজাতির ৩২ টি পাখি হত্যা
-খেজুরের গুঁড় তৈরিতে হাইড্রোজ, চিটাগুড়,চিনি মিশ্রিত করা
-মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ ও খাদ্যদ্রব্য বিক্রয়
-বিপদজনকভাবে গাড়ি চালনা
-খাদ্যে ভেজাল মেশানো
-ইভটিজিং
-পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার না করা
-দোকানে দৃশমান স্থানে পণ্যের মূল্যের তালিকা লটকায়ে প্রদর্শন না করা
-অবৈধ পাওয়ার ক্রাশার ব্যবহার
-পরিবেশ দূষণ
-নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে ইলিশ নিধন
- নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন।
৩) হাসপাতালের মর্গে গিয়ে গুলিতে ঝাঁজরা মৃৎ লাশের শরীর আদ্যোপান্ত দেখে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছি।
৪) জেলা প্রশাসক স্যারের স্টাফ অফিসার, ডিসি অফিসের সাধারণ শাখা, আইসিটি ও ইনোভেশন শাখা, ফ্রন্ট ডেস্ক শাখা,প্রটোকল, প্রবাসী কল্যাণ শাখার সেকশন অফিসার হিসাবে এবং প্রায় প্রতিটি শাখারই প্রতিভু কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।
৫) প্রায় শ'খানেক মিটিং আয়োজন করা, মিটিং এর রেজুলেশন তৈরি করা, বিভিন্ন দিবস উদযাপন, জেলা পর্যায়ের সকল অফিসের সহায়তায় নানান রিপোর্ট তৈরি করা।
৬) মন্ত্রী মহোদয় এবং সিনিয়র স্যারদের প্রটোকলের দায়িত্ব পালন করেছি।
৭) ট্রাকে করে সঙ্গীয় ফোর্সসহ পাব্লিক পরিক্ষার(এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স এরকম) প্রশ্ন ঢাকা থেকে জেলাতে আনা।
৮) সর্বশেষে গত সাড়ে ৩ মাস ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামে সংযুক্ত থাকার সুবাদে পুরোদমে কর্পোরেট পরিবেশে UNDP অফিসে কাজ করছি। আমরা সারাদেশের প্রতিটি সরকারী অফিসের(প্রায় ৪৩০০০) জন্য ওয়েবসাইট তৈরির কাজ করছি। ওয়েবসাইট তৈরির পর জেলায় জেলায় গিয়ে অফিসগুলোকে ট্রেনিং(এখনো পর্যন্ত ১৯টি জেলায়) দিচ্ছি যাতে তারা নিজেদের ওয়েবসাইট আপডেট রাখতে পারে। উল্লেখ্য এই ওয়েবসাইটগুলির মাধ্যমে সাধারণ মানুষ জানতে পারবে মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো অফিস কি ধরণের সেবা দেয়, কোন সেবা কিভাবে পাওয়া যায়, ঐ অফিসে কোন কোন কর্মকর্তা/কর্মচারি কোন কোন পদে কর্মরত আছেন,তাদের মোবাইল নম্বর এসবকিছু। এভাবে সকল তথ্য মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছি।
সারাজীবন যেন এভাবেই নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করতে পারি সকলের কাছে এই দোয়াই চাই।
নাজমুল আলম,
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নাটোর
২ মে, ২০১৮
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস